১৫ শতকে ইনকা সভ্যতা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মাচু পিচু ইনকা সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আজ এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত।
মাচু পিচু একটি আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। এটি সম্ভবত ইনকা শাসক পচাকুটির ব্যক্তিগত বাসস্থান এবং একটি পবিত্র স্থান ছিল। ইনকাদের উন্নত স্থাপত্য, কৃষি এবং প্রকৌশল দক্ষতা এখানে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ইনকা সাম্রাজ্যের পতনের পর মাচু পিচু পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং অনেক বছর ধরে এটি অজানা ছিল। ১৯১১ সালে আমেরিকান ইতিহাসবিদ হিরাম বিংহ্যাম এটিকে পুনরাবিষ্কার করেন এবং তার পর থেকেই এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
কোথায়:
মাচু পিচু পেরুর কুজকো (Cusco) শহরের প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি আন্দিজ পর্বতমালার মধ্যে প্রায় ২,৪৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। উরুবাম্বা নদীর (Urubamba River) উপরে অবস্থানরত মাচু পিচু একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের স্থান।
ইতিহাস:
মাচু পিচু ইনকা সাম্রাজ্যের শাসনকালে ১৫ শতকের মধ্যভাগে নির্মিত হয়। ইনকা সভ্যতার পতনের পর, মাচু পিচু বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমা বিশ্বের অজানা ছিল। ১৯১১ সালে হিরাম বিংহ্যাম এটিকে পুনরাবিষ্কার করেন এবং তার পর থেকেই এটি গবেষকদের এবং পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
দর্শনীয় স্থানগুলো:
মাচু পিচুর ভেতরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যিক স্থানের সন্ধান পাওয়া যায়:
- সান টেম্পল (Temple of the Sun): এটি একটি পবিত্র স্থান, যা সূর্যের উপাসনা করার জন্য ব্যবহৃত হত। ইনকা সভ্যতায় সূর্য দেবতা ইন্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন।
- ইনটিহুয়াতানা (Intihuatana): এটি একটি পাথরের সলিড স্তম্ভ, যা সূর্যের অবস্থান নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হত। ইনকারা এর মাধ্যমে ক্যালেন্ডার তৈরি করত এবং ঋতু পরিবর্তন নির্ধারণ করত।
- প্রধান মন্দির (Main Temple): এই মন্দিরে ইনকারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করত এবং এটি মাচু পিচুর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
- রুমস অফ দ্য থ্রি উইন্ডোজ (Rooms of the Three Windows): এটি একটি তিনটি জানালাবিশিষ্ট স্থান, যেখান থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায় এবং সূর্যের আলো প্রবেশ করে।
- টাররেসেস (Terraces): মাচু পিচুতে বিভিন্ন স্তরের কৃষি টেরেস রয়েছে যা ইনকারা খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করত।
ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য:
- সময়সূচি: মাচু পিচু সারা বছর খোলা থাকে এবং সাধারণত সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
- টিকেটের দাম: মাচু পিচুতে প্রবেশের জন্য টিকেটের প্রয়োজন হয়, যা অনলাইনে অগ্রিম বুক করা উচিত। ভ্রমণের সময় এবং উপলব্ধতার উপর ভিত্তি করে টিকেটের দাম ভিন্ন হতে পারে। বিশেষত, ভোরে সূর্যোদয়ের সময় ভ্রমণ করলে, এই অভিজ্ঞতা একটু বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে।
- যাতায়াত: মাচু পিচুতে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হলো কুজকো থেকে ট্রেনে আসা। এগ্রাস ক্যালিয়েন্তাস (Aguas Calientes) নামে পরিচিত শহর থেকে বাসে করে মাচু পিচুতে পৌঁছানো যায়। অনেক পর্যটক ট্রেকিং করে ইনকা ট্রেইল (Inca Trail) পেরিয়ে মাচু পিচুতে যান, যা একটি জনপ্রিয় অভিজ্ঞতা।
- পরামর্শ: ভ্রমণের আগে উচ্চতা পরিবর্তন ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। ভিড় এড়াতে সকালে খুব তাড়াতাড়ি অথবা বিকেলের দিকে মাচু পিচুতে যাওয়া ভাল। এছাড়াও, মাচু পিচুর ভেতরে চলাচলের সময় টিকেট এবং পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে।
অন্যান্য তথ্য:
মাচু পিচুতে ফটোগ্রাফি করার সময় এটি মনে রাখতে হবে যে এটি একটি পবিত্র স্থান এবং যথাযথ সম্মান ও শৃঙ্খলার সাথে এর ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। পেরুতে মাচু পিচু একটি বিশেষ স্থানে অবস্থানরত, যা ইনকা সভ্যতার প্রতীক এবং আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য নিদর্শন।