বিছনাকান্দি মূলত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে যে স্থানে মিলিত হয়েছে তারি নাম। বিছানাকান্দি মূলত সিলেটের গোয়াইন ঘাট উপজেলার রূস্তমপুরে ইউনিয়ন এ অবস্থিত ।
মূল আকর্ষনঃ
পর্যটকদের কাছে বিছানাকান্দির মূল আকর্ষন হচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি আর সেই সাথে মেঘালয় পাহাড়ের খাঁজে থাকা সুউচ্চ ঝর্ণা যা বিছনাকান্দিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। প্রথম দেখায় আপনার মনে হবে এ যেন এক পাথরের বিছানা, আর স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতেই যে মানসিক প্রশান্তি পাবেন এই প্রশান্তি আপনাকে বিছানাকান্দি টেনে নিয়ে যাবে বারবার।
বিছনাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বিছনাকান্দি যে কোন সময় ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত। তবে বর্ষাকাল বিছানাকান্দি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকার কারণে এ সময় বিছানাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়া যায়। বছরে অন্য সময় এখানে পাথর উত্তোলনের কারণে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
বিছনাকান্দি যাওয়ার উপায়
দেশের যেখানেই থাকেন আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে বিছনাকান্দি যাবার জন্যে। তারপর সিলেট থেকে বিছনাকান্দি যেতে হবে।
ঢাকা থেকে সিলেট যাবার উপায়
১. বাসে ভ্রমণ করে
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা প্লেনে আপনি সিলেট যেতে পারবেন। ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটগামী এসি বা নন এসি বাসে যেকোনো বাসে চড়ে প্রথমে সিলেট এ চলে আসতে হবে । বাস ভেদে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা।
২. ট্রেনে ভ্রমণ করে
অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে করে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চলে আসতে পারেন সিলেটে । ট্রেনে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।
৩. দ্রুত সময়ে আসতে চাইলে আকাশ পথে
ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার, এয়ার আস্ট্রা এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্রেণিভেদে টিকেট মূল্য ৩,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
সিলেট থেকে বিছনাকান্দি
বিছনাকান্দি যেতে সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে। সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকার মত লাগবে। হাদারপার এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দির মেইন পয়েন্টে যেতে পারবেন। বর্ষাকালে বিছনাকান্দি ভ্রমণে গেলে বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী নৌকার মাঝির সাথে কথা বলে নিন। শুধু বিছনাকান্দি যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া লাগবে ৮০০-১৫০০ টাকা। আর পান্থুমাই সহ নৌকা ভাড়া লাগবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। আর অবশ্যই দামাদামি করে নৌকা ভাড়া ঠিক করে নিবেন। বড় ট্রলার ভাড়া করতে কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫০০ পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে। শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে সেসময় আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেটে বা বাইকে চড়ে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। জনপ্রতি মটরবাইক ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
বিছনাকান্দিতে গোসল করলে পোষাক পরিবর্তনের প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায়।
বিছনাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।
- খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন।
- নৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।
- বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
- বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর, তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
- দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
![](https://bdtravelblog.com/wp-content/uploads/2022/07/bichanakandi.jpg)