বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং প্রাচীন হিন্দু মন্দির, যা মূলত মন্দিরের দেয়ালের টেরাকোটা শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত
কান্তজির মন্দির, যা কান্তনগর মন্দির নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক হিন্দু মন্দির। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং প্রাচীন হিন্দু মন্দির, যা মূলত মন্দিরের দেয়ালের টেরাকোটা শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত। মন্দিরটি রাধা-কৃষ্ণকে উৎসর্গ করে নির্মিত হয়েছিল এবং এর স্থাপত্যশৈলী ও কারুকাজ বাংলাদেশের মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি অসাধারণ উদাহরণ।
কান্তজির মন্দির তার অসাধারণ টেরাকোটা কাজের জন্য বিখ্যাত। মন্দিরের দেয়ালে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ঘটনার দৃশ্যাবলী টেরাকোটা ফলকে খোদাই করা আছে। মন্দিরের তিনটি তলায় নির্মিত স্তূপগুলো এবং এর কেন্দ্রীয় মন্দিরটি মধ্যযুগীয় হিন্দু স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। মন্দিরের কারুকাজের নিখুঁততা, নিসর্গ এবং আকার-প্রকৃতির জন্য এটি বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।
কোথায় অবস্থান:
কান্তজির মন্দির বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত। এটি দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কান্তনগর নামক স্থানে অবস্থিত।
কান্তজির মন্দির ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য:
যাতায়াত: ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার জন্য সরাসরি বাস, ট্রেন, বা প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করা যায়। দিনাজপুর থেকে কান্তজির মন্দিরে যাওয়ার জন্য স্থানীয় যানবাহন (অটো রিকশা, বাস) পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার এবং বাস বা ট্রেনে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগে।
খোলার সময়: কান্তজির মন্দির প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে, উৎসবের সময় বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে পারে।
প্রবেশ মূল্য: কান্তজির মন্দিরে প্রবেশের জন্য সাধারণত কোনো ফি নেই। তবে, স্থানীয় কিছু সেবা বা গাইডের জন্য ছোটখাটো ফি লাগতে পারে।
কান্তজির মন্দিরের দর্শনীয় স্থান:
১. মন্দিরের টেরাকোটা শিল্প: মন্দিরের দেওয়ালে থাকা টেরাকোটা ফলকগুলোতে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঘটনা খোদাই করা আছে। প্রতিটি ফলকে এমন সূক্ষ্ম কাজ করা হয়েছে, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
২. কেন্দ্রীয় মন্দির: মন্দিরের কেন্দ্রীয় স্থাপনা এবং এর স্তূপগুলো মধ্যযুগীয় হিন্দু স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
৩. বসন্তকালীন মেলা: প্রতি বছর বসন্তকালে মন্দির প্রাঙ্গণে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হস্তশিল্প, এবং স্থানীয় পণ্য প্রদর্শিত হয়।
৪. পরিবেশ: মন্দিরের চারপাশে সবুজ প্রকৃতি, শান্ত পরিবেশ, এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলার গ্রামীণ আবহাওয়া মনোমুগ্ধকর।
ভ্রমণ টিপস:
- মন্দিরের টেরাকোটা শিল্পকর্ম সম্পর্কে আরও জানতে স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিন।
- মন্দিরের এলাকাটি বেশ বড়, তাই আরামদায়ক জুতো পরিধান করুন।
- যদি সম্ভব হয়, বসন্তকালে মন্দির পরিদর্শন করার চেষ্টা করুন, কারণ তখন মেলা এবং উৎসবের কারণে এলাকাটি আরও প্রাণবন্ত হয়।
- স্থানীয় হোটেল বা রেস্টুরেন্টে দিনাজপুরের বিশেষ খাবার যেমন কাটারিভোগ চালের ভাত এবং অন্যান্য স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে ভুলবেন না।
- মন্দিরের ছবি তুলতে ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন, তবে মন্দিরের অভ্যন্তরে ফটো তোলার আগে অনুমতি নিয়ে নিন।
কান্তজির মন্দির তার স্থাপত্যশৈলী, টেরাকোটা শিল্প এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান। এটি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি স্থান, যা আপনার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তুলবে।
![](https://bdtravelblog.com/wp-content/uploads/2024/08/Kantajew-Temple2.jpg)