আমেরিকা ভ্রমণ

Easter Island প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে রহস্যময় এবং বিশালাকার মূর্তি, যা “মোয়াই” (Moai) নামে পরিচিত

ইস্টার দ্বীপ হলো চিলির একটি দ্বীপ, যা বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন বাসযোগ্য দ্বীপগুলির মধ্যে একটি। এর প্রধান আকর্ষণ হল বিশালাকার মোয়াই মূর্তিগুলি, যা পাথরের খোদাই করা মূর্তি এবং রাপা নুই জনগণের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ।

ইস্টার দ্বীপ রহস্য এবং প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলির জন্য বিখ্যাত। মোয়াই মূর্তিগুলি হাজার হাজার বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল এবং এগুলি প্রাচীন রাপা নুই জনগণের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতীক। এছাড়া, দ্বীপটির অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর বিচ্ছিন্নতা এটিকে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল করে তোলে।

কোথায়:

ইস্টার দ্বীপ চিলি থেকে প্রায় ,৫১২ কিলোমিটার (২,১৮২ মাইল) দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি চিলির প্রশাসনিক অধিকারাধীন, তবে এটি মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

ইতিহাস:

ইস্টার দ্বীপের ইতিহাস প্রায় ১২০০ খ্রিস্টাব্দে রাপা নুই জনগণের আগমন দিয়ে শুরু হয়। তারা মূর্তি তৈরির জন্য বিখ্যাত, যেগুলি দ্বীপের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছিল। মোয়াই মূর্তিগুলি ধারণা করা হয় যে পূর্বপুরুষদের স্মরণে তৈরি করা হয়েছিল এবং তারা দ্বীপের অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হত।

১৮শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা দ্বীপটি আবিষ্কার করে এবং ১৭২২ সালে প্রথম ইউরোপীয় অভিযাত্রী জ্যাকব  রোগেভিন দ্বীপে পৌঁছান এবং এটি “ইস্টার দ্বীপ” নামকরণ করেন কারণ এটি ইস্টার রবিবারে আবিষ্কৃত হয়েছিল। দ্বীপটি পরে স্প্যানিশ এবং ব্রিটিশ অভিযাত্রীদেরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

দর্শনীয় স্থান:

ইস্টার দ্বীপের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হলো:

  1. মোয়াই মূর্তিগুলি: এই বিশালাকার মূর্তিগুলি দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। এগুলি রাপা নুই জনগণ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল এবং দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে।
  2. রানো রারাকু (Rano Raraku): এটি একটি আগ্নেয়গিরির ক্রেটার যেখানে মোয়াই মূর্তিগুলি খোদাই করা হয়েছিল। এখানে অসংখ্য অসমাপ্ত মোয়াই দেখা যায়, যা দ্বীপের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  3. আহু টঙ্গারিকি (Ahu Tongariki): এটি একটি বৃহৎ পাথরের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ১৫টি মোয়াই মূর্তি সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এটি দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত আহু (মূর্তি স্থাপনার স্থান)।
  4. রানো কাও (Rano Kau): এটি আরেকটি আগ্নেয়গিরির ক্রেটার, যা দ্বীপের সবচেয়ে উঁচু স্থানে অবস্থিত এবং এখান থেকে দ্বীপের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।
  5. অর্ণকেনা বিচ (Anakena Beach): এটি দ্বীপের অন্যতম প্রধান সমুদ্র সৈকত, যেখানে সাদা বালির সমুদ্রতীর এবং কয়েকটি মোয়াই মূর্তি রয়েছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি রাপা নুই জনগণের প্রথম আগমনের স্থান বলে মনে করা হয়।
  6. ঐতিহাসিক গ্রাম (Orongo): এটি একটি প্রাচীন গ্রাম যা রানো কাও আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত। এটি পাখি মানব প্রতিযোগিতার জন্য বিখ্যাত, যা দ্বীপের ধর্মীয় উৎসবের অংশ ছিল।

ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য:

কিভাবে পৌঁছানো যায়:
ইস্টার দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো থেকে নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে। LATAM Airlines সান্তিয়াগো থেকে দ্বীপের মাতাভেরি বিমানবন্দর (Mataveri International Airport) পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটটি প্রায় ৫-৬ ঘন্টা সময় নেয়।

ভ্রমণের সেরা সময়:
ইস্টার দ্বীপ ভ্রমণের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসের সময় সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময়ে আবহাওয়া শুষ্ক ও মৃদু থাকে এবং দ্বীপে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব এবং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

প্রবেশমূল্য:
ইস্টার দ্বীপে প্রবেশের জন্য এবং ন্যাশনাল পার্ক (Rapa Nui National Park) দর্শনের জন্য একটি প্রবেশমূল্য রয়েছে। এটি সাধারণত চিলির মুদ্রায় বা মার্কিন ডলারে প্রদান করা যায়।

ভ্রমণ পরামর্শ:

  • দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে পর্যটন ব্যবস্থা সীমিত। তাই আগেই হোটেল ও ট্যুর বুকিং করা উচিত।
  • দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলা জরুরি।
  • স্থানীয় গাইডদের সহায়তা নিয়ে দ্বীপের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।

সংক্ষিপ্তভাবে:

ইস্টার দ্বীপ তার রহস্যময় মোয়াই মূর্তি এবং প্রাচীন রাপা নুই সভ্যতার নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি অনন্য এবং বিচ্ছিন্ন গন্তব্যস্থল, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অপূর্ব অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

Admin

About Author

Leave a comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may also like

আমেরিকা ভ্রমণ

Uyuni Salt Flat হলো বলিভিয়ায় অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম লবণের সমভূমি

  • জুলাই 15, 2024
Uyuni Salt Flat (স্প্যানিশে “Salar de Uyuni”) হলো বলিভিয়ায় অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম লবণের সমভূমি। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, এবং